Monday, September 22, 2014

চাকরি

অনুমিতার আর কান্না পাছিল না। সারারাত ঘুম হয়নি তার। শুধু কেঁদেছে, আর ভেবেছে কি দোষ করেছিলো সে যে ভগবান তাকে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে? দু মাসের কচি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে খালি তার চোখ জলে ভরে আসছিল। কি করা উচিৎ তার কিচ্ছু বুঝতে পারছিল না সে। আজকের বাজারে ওরকম মাইনের একটা চাকরি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সবে দেড় মাস হল তার স্বামি মারা গেছে। এখন ঐ চাকরি যদি সে নেয় লোকে কি বলবে? দেবযানীকে বলেছিল সে কথা। তার উত্তরে দেবযানী তাকে যে কথাটা বলেছিল সেটা তার মনে গভীর দাগ কেটেছিল। দেবযানী ওকে বলেছিল "যদি তুই খেতে না পাস, লোকে তোকে খাওয়াবে? তাহলে লোকের কথায় কান দিচ্ছিস কেন?" কথাটা খাঁটি। কিন্তু সে যে বিধবা। এখন কি সাজগোজ করা তাকে মানাবে?

   অনুমিতা অনাথ। সুপ্রিয় ওকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলো। সুখের সংসার টিকেছিল বছর দেড়েক। তারপরই হঠাৎ একটা অ্যাকসিডেন্টে সুপ্রিয় চলে গেল। জমানো টাকা তেমন কিছুই ছিল না। মাথার ওপর গুরুজন বলতে ননদ দেবযানী। সুপ্রিয় ওকে বলেছিল যে কোনও প্রয়োজনে দিদির সঙ্গে কথা বোলো। দিদি বড় কম্পানিতে চাকরি করে। একমাত্র ওই আমাদের শুভাকাঙ্খি। আর কাউকে বিশ্বাস কোর না। দেবযানী সাহায্য করেওছিল। ওরই কোম্পানিতে ভালো মাইনের একটা চাকরি দেখে দিয়েছিল সে। দেবযানীকে বলাতে সে ই ওর বস কে বলে রেখেছিল। অনুমিতাকে জানিয়েছিল সেলস এগজিকিউটিভের চাকরি। ওদের কম্পানির হয়ে অফিসে অফিসে গিয়ে ওদের প্রোডাক্ট সেল করতে হবে। অনুমিতা রাজি হতে দেরি করেনি। তারপর দেবযানী সব বন্দোবস্ত পাকা করে অনুমিতাকে বাকিটা বলেছিল ওর বাড়ি এসে। আর যা বলেছিল সেটাই মেনে নিতে পারছিল না অনুমিতা। ওই চাকরি করতে গেলে অনুমিতার শিক্ষাগত যোগ্যতা নাকি যথেষ্ট নয়। অনুমিতাকে হতে হবে কেতাদুরস্ত, যেন ক্রেতারা ওকে দেখে উৎসাহী হয় এমন সাজগোজ করতে হবে ওকে, এটাই চাকরি পাওয়ার একমাত্র শর্ত। এই শর্তে যদি রাজি থাকে অনুমিতা তবেই সে চাকরি পাবে নয়ত নয়। অনুমিতা কোনও উত্তর দিতে পারেনি। দেবযানী অনেক বোঝানোর পরও যখন দেখল অনুমিতা কেঁদেই চলেছে তখন সে আর কোনও ভাষা খুজে পায়নি। অবশেষে বলেছিল "ভেবে দেখ, কি ঠিক করিস কাল জানাস, আর হ্যাঁ হোক আর না ই হোক একবার বসের সঙ্গে দেখা করতে হবে তোকে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে না গেলে ব্যাপারটা খারাপ হবে। হাতে সময় আছে দুদিন। ভেবে দেখ কি করিস।

   অনুমিতা সারারাত কেঁদেও কোনও কূলকিনারা পায়নি। সকালে শিশুটার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বুঝিয়েছিল, যে গেছে সে আর ফিরবেনা, এবার নিজেকেই সামলাতে হবে। তাই অতীতটাকে সরিয়ে রেখে ভেতরে ভেতরে নিজেকে শক্ত করছিল, লড়াই করার জন্যে। কিন্তু জতই ভাবছিল ততই চোখ ভরে আসছিল জলে। শেষে কপাল ঠুকে রাজি হয়ে গেল সে। মোবাইলটা তুলে নিয়ে দেবযানীর নম্বর ডায়াল করে বলে দিল সে রাজি। দেবযানী ওকে উৎসাহ দিল আর বলল সন্ধ্যে বেলা এসে সব বলে যাবে কি কি করতে হবে।

  ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় কলিং বেল বাজল। অনুমিতা ছেলেকে খাওয়াচ্ছিল। উঠে গিয়ে দরজা খুললো। দেবযানী ই এসেছে। ওকে দেখেই একগাল হাসল দেবযানী। অনুমিতাও একটু হাসার চেষ্টা করল। তারপর দুজনে ঘরে এসে বসল। দেবযানীই প্রথম কথা বলল।
 - "একদম ঠিক ডিসিশন নিয়েছিস তুই। কাজটা ভালো তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর তুই তো কোনও বাজে কাজ করছিস না। কম্পানি ভালো। লোকজন ভালো। আর কাজের মধ্যে থাকলে মনটাও ভালো থাকবে।"
 - " আমায় এখন কি করতে হবে?"
 - " কিছু না। যা করার আমিই করে দেবো। তুই কোনও চিন্তা করিস না। কাল তৈরি থাকিস। সকাল দশটা নাগাদ আমি তোকে এখান থেকেই তুলে নেবো।"
অনুমিতা ঘাড় নাড়ল।

     *****************************************************************************

   অনুমিতা মামার বাড়িতে মানুষ। মামা মানুষটা কোনোদিনই সদাশয় ছিলেন না অনুমিতার প্রতি। ওকে বিদেয় করতে পেরে যেন শান্তি পেয়েছিলেন। ওর বিয়ের পর আর কোনও যোগাযোগ রাখেন নি। অনুমিতা দেখতে সুনতে মন্দ নয়। বি.এ পাশ। শরীরের গড়ন রোগাটে। উচ্চতা ৫' ৬", ফরসা বলা চলে। পাছা অব্দি একঢাল কুচকুচে কালো ঘন চুল। বড়বড় চোখ। সহজ সরল বুদ্ধিদিপ্ত মুখ। এক কথায় নারী হিসেবে আকর্ষণীয়। জীবন সংগ্রামের ছাপ স্পষ্ট।ওর সবথেকে যেটা আকর্ষণীয় তা হল ওর ওই লম্বা চুল। আজকালকার দিনে অত লম্বা সুন্দর চুল খুব একটা দেখা যায় না। তা অনুমিতা নিজেও জানে। ওর চুল ওর একরকম দুর্বলতা বলা চলে। কখনও এক ইঞ্চিও কাটেনি ওই চুল। সুপ্রিয়ও খুব পছন্দ করত ওই চুল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলা করত ওর চুলের গোছা টা নিয়ে। অনুমিতাও কখনও লম্বা বেণি কখনও উঁচু খোঁপা করে সুপ্রিয় কে দুষ্টুমি করার সুযোগ করে দিত। সুপ্রিয় যখন বিছানায় শুয়ে ওর চুল নিয়ে খেলা করত তখন ও ঘুমনোর ভান করে সবটুকু ভালবাসা অনুভব করত ওর চুল দিয়ে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে অনুমিতার সেই সব কথা মনে পরছিল। অনুমিতা তৈরি হচ্ছিল দেবযানীর সঙ্গে বেরোনোর জন্যে। কোথায় যাচ্ছে সে জানে না। যেখানেই যেতে হোক সে রাজি। যাই করতে হোক সে প্রস্তুত। জীবন বড্ড কঠিন শিক্ষক।

    ঠিক দশটা পাঁচে কলিং বেল বাজল। অনুমিতাও তৈরি। ছেলেকে পাশের ফ্লাটের রিতাদির কাছে দিয়ে সে বেরিয়ে এল। দেবযানীর কথা মত বলে এল ঘণ্টা তিনেক লাগবে, তার মধ্যেই ফিরে আসব।

    দুজনে গাড়িতে উঠল। দেবযানীই চালাচ্ছিল। আর আড় চোখে লক্ষ্য করছিল অনুমিতা কে। দেবযানীর পরনে ডার্ক ব্লু ডেনিম জিন্স আর স্কিন টাইট টপ। চোখে সানগ্লাস। সে লক্ষ্য করছিল দেবযানীকে আর কেন জানি অল্প হাসছিল ওকে দেখে। দেবযানী পরে ছিল সিল্কের শাড়ি। চুল টা লম্বা বেণি করে কাঁধ দিয়ে ঘুরিয়ে সামনে নিয়েছে। দুই হাঁটুর মাঝ দিয়ে সিটের নিচে চলে গেছে সেই বেণি, ডগা দেখা যায় না। ও আনমনে তাকিয়ে ছিল জানলার দিকে। দেবযানীই কথা বলল এবারও
 - "কি ভাবছিস?"
      অনুমিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,  "কিছু না।" তারপর একটু থেমে জানতে চাইল কোথায় যাচ্ছি আমরা?"
দেবযানী কেমন একটু নির্বিকার ভাবে উত্তর দিল " স্যালন " অনুমিতা একবার তাকাল ওর দিকে। লক্ষ্যহীন দৃষ্টি। কিছুই বলল না।

     মিনিট দশেকের মধ্যে তারা এসে পৌঁছাল একটা নামি লেডিস সালনের সামনে। গাড়ি পার্ক করে দুজনে ঢুকল। দেবযানী আগের দিনই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছিল। ওই গিয়ে কথা বলল রিসেপ্সনিস্টের সঙ্গে। মিনিট দুয়েক পর ফিরে এসে বলল "আয়"।

     ওকে অনুসরন করে দুজনে পৌঁছাল পরের ঘরে। চারদিকে আয়না লাগানো ঝাঁ চকচকে পার্লার। জনা দুই মহিলা ট্রিটমেন্ট করাচ্ছেন। ঘুরে বেরাচ্ছে ইউনিফর্ম পরা সুন্দরী মেয়েরা। তাদেরই একজন এগিয়ে এসে দেবযানীকে ইংলিশে জানতে চাইল কি করাতে চায়। দেবযানী অনুমিতাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল "এঁর একটা মেকওভার প্যাকেজ সিলেক্ট করেছিলাম" তারপর তাকে সব বুঝিয়ে দেওয়ার পর মেয়েটি অনুমিতাকে একটি চেয়ার দেখিয়ে দিল। দেবযানী চোখের ইশারায় অনুমিতাকে সেখানে বসতে বলল। অনুমিতাও বাধ্য মেয়ের মত বসল। সে লক্ষ্য করল মেয়েটি তার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম জড়ো করছে সামনের টেবিলে। সবার আগে যেটিতে চোখ পড়াতে অনুমিতার বুকটা ধড়াস করে উঠল সেটি হল একটি ছোট স্ট্যান্ডে ঝোলানো বিভিন্ন রকমের কাঁচি। আর ছিল কয়েকটি চিরুনি। বিভিন্ন রকম ও সাইজের বোতলে বিভিন্ন রকম প্রসাধন যার একটিও সে চেনে না। সে একবার ঘুরে দেবযানীকে দেখার চেষ্টা করলো। সামনের আয়নায় যে তাকে দেখা যাচ্ছে সেটা সে লক্ষই করলো না। ওকে ছটফট করতে দেখে দেবযানী এগিয়ে এলো।

 - " কিরে কি হল?"
 - " ওরা কি আমার চুল..."
প্রশ্নটা শেষ হল না। দেবযানী তার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল
 - "সে তো কাটবেই অনু। তুই কি চাস না? তাহলে বল আমরা ফিরে যাই। কিন্তু যব টা পেতে গেলে তোকে এটুকু তো পাল্টাতেই হবে। না?"
   অনুমিতা ছলছল চোখে একবার ওর দিকে দেখল। কিছু বলল না। তারপর অস্ফুটে বলল, " বেশি না প্লিজ।"
দেবযানী ওর কাঁধে আর একবার হাত দিয়ে চোখের ইশারায় ওকে আশ্বস্ত করে আবার পিছিয়ে এসে দাঁড়াল।

   ইউনিফর্ম পরা মেয়েটি ততক্ষণে এগিয়ে এসে ওর বেণীটা নেড়েচেড়ে দেখে সেটা খুলতে সুরু করেছে। যতক্ষণে গোটা বেণীটা খোলা হল একরাশ কালো মখমল চেয়ারের পেছন টা ঢেকে ফেলেছে। দেবযানী দেখছিল পেছনে দাঁড়িয়ে। ইউনিফর্ম পরা মেয়েটি ওকে জিগ্যেস করলো "লেংথ কি ছোট করবেন?" অনুমিতা বড় বড় চোখে ভয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে দেবযানীর দিকে । দেবযানী কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অনুমিতার চুলের দিকে তারপর তাকাল আয়নায় অনুমিতার দিকে। তারপর ওই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে এমন একটা ইসারা করলো যার মানে হ্যাঁ ও হয় আবার না ও হয়। মেয়েটি কি বুঝল তা অনুমিতা বুঝতে পারলো না। সে দম বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে বসে রইল সব কিছু অদৃষ্টর ওপর ছেড়ে দিয়ে। মেয়েটি অনুমিতার গলায় একটা দামী কেপ জড়িয়ে দিল। তারপর চুলটা ভালো করে আঁচড়াতে লাগলো। মিনিট পাঁচেক আঁচড়ানোর পর অনুমিতা অনুভব করলো তার মাথায়, চুলে ঠাণ্ডা জল ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলল সে। মেয়েটি তারপর সামনের টেবিল থেকে একটি চিরুনি ও পছন্দসই একটি কাঁচি তুলে নিয়েছে। মেয়েটি এরপর তার পিছনের দিকে গেল। এরপর আর মেয়েটিকেও দেখা গেল না, কারন সে নিচু হয়ে প্রায় বসে পড়েছে চেয়ারের পেছনে। কিছুক্ষণ কুচ কুচ আওয়াজ পেলো অনুমিতা। ততক্ষণে ওর হৃৎস্পন্দন তিনগুন হয়ে গেছে। প্রায় মিনিট দেড়েক পর মেয়েটি দেবযানীকে জিগ্যেস করলো " এই লেংথ ঠিক আছে?" দেবযানী এগিয়ে এলো তারপর হাত দিয়ে একটা নির্দিষ্ট লেংথ ইশারায় বুঝিয়ে দিল মেয়েটিকে। অনুমিতা বুঝতে পারলো না সেটা ঠিক কতটা। তবে এটা বুঝতে পারলো তার এতদিনের ঐশ্বর্য আজকের পর আর তার থাকবে না। তবে সে বুঝতে পারলো তার আর ভয় করছে না। সব অনুভূতি লোপ পেয়েছে। কুচ কুচ কুচ কুচ আওয়াজ টা সমানেই হয়ে চলেছে তার পিছনে। এতক্ষণে কাঁচির আর চুলের সংঘর্ষ সে অনুভব করতে শুরু করেছে, কারন মাথায় অল্প অল্প টান অনুভব করছে। কাঁচির আওয়াজ টাও যেন অনেক ওপরে উঠে এসেছে। মেয়েটি আর অতটা নিচু হয়ে নেই। সামান্য ঝুঁকে রয়েছে মাত্র। মিনিট পনেরো পর যখন তাকে মেয়েটি শ্যাম্পু করানোর জন্যে নিয়ে যাচ্ছিলো আয়নায় দেখতে পেলো তার খোলা চুল যার ডগাটা এতদিন সে উরুর কাছে অনুভব করেছে তা কনুই অব্দিও যাচ্ছে না। বরং কাধের অল্প নিচেই শেষ হয়ে গেছে। তার আর কিছু মনে হল না। যদিও যন্ত্রণা অনেক বাকি ছিল তার। শ্যাম্পুর পর আবার যখন তাকে আবার সেই চেয়ারে এনেই বসানো হল এবং হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে যখন মেয়েটি তার চুল শুকিয়ে নিচ্ছিল তখন ড্রায়ারের গরম হাওয়ার চেয়েও গরম হয়ে উঠেছিল তার গাল কান। মেয়েটি তাকে বলল কানের দুল খুলে নিতে। সে দুল খুলে দেবযানীর হাতে দিয়ে দিল। এরপর মেয়েটি তার চুল নিয়ে যেন ছেলেখেলা শুরু করলো। তার ঘন চুলে কাঁচি আর চিরুনি যেন খেলা করে বেরাতে লাগলো। আর থোকা থোকা টুকরো টুকরো কাটা চুলের স্তূপ জমা হতে লাগলো তার কোলে কাঁধে ঝরে পরতে লাগলো মেঝেতে। যখন এই খেলা থামল তখন অনুমিতাকে প্রায় চেনা যায় না। তার বাঁ চোখ দু গাল কান থুৎনি অব্দি ঢাকা পড়েছে তার মাথার সামনের ভাগের চুলের বিভিন্ন লেয়ারে। আর পেছনের ভাগের সব থেকে লম্বা চুলের দৈর্ঘ্য কনরকমে তার ঘাড় ঢেকে রেখেছে। সামনের আয়নায় যে মেয়েটিকে আয়নায় অনুমিতা দেখতে পেলো সে দেখতে অনেকটা তার মত হলেও তার গাল অব্দি কেতাদুরস্ত চুলের ছাঁটে অমিলটাই বেশি ধরা পরে। একে সে আয়নায় কখনও দেখেনি।

   এরপর চুল কালার করতে আরও আধঘণ্টা লাগলো। কিন্তু তারপর আয়নার মেয়েটির সঙ্গে তার আর কোনও মিল ই খুজে পাওয়া যায় না। অনুমিতার ছিল উরু অব্দি ঘন কুচকুচে কালো চুল। আর ওই মেয়েটির গাল অব্দি লেয়ারড বাদামী চুল তার মাঝে সোনালী হাইলাইট। অসাধারণ সুন্দরী সে, পুরনো অনুমিতার মত স্নিগ্ধ নয়। তার রুপে যেন ছেঁকা লাগে। অবাক হয়ে অনুমিতা দেখতে লাগলো আয়নার নিজেকে। আগে রাস্তায় ওরকম সাজের মেয়েদের দেখে ও ভাবত নাজানি ওরা কোন গ্রহের মানুষ। আজ সে নিজেও ওদের একজন।

  এরপর আরও ঘণ্টা খানেক সে পার্লারে ছিল। তার মধ্যে আধ ঘণ্টা লেগেছিল সাড়া শরীরের লোম তুলতে। ওকে অন্য একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে অন্তরবাস বাদে বাকি সমস্ত জামা কাপড় খুলিয়ে অদ্ভুত একটা জামা পড়িয়ে সাড়া শরীরে আঠা মাখিয়ে টেনে টেনে লোম তুলছিল দুটি অচেনা মেয়ে। অনুমিতা অবাক হচ্ছিল। একটা চাকরি করতে তার শরীরে লোম আছে না নেই এই প্রশ্ন কতটা প্রাসঙ্গিক সে বুঝতে পারেনি।

 দুপুর দুটো নাগাদ যখন অনুমিতা রিতা দির কাছে গিয়েছিল ছেলেকে নিতে রিতাদি অবাক হয়ে তাকিয়েছিল ওর দিকে। কোনও কথা বলেনি।

 পরদিন যখন অনুমিতা হাইহিল, মিনি স্কাট আর ফরমাল টপ এ অফিসে ঢুকেছিল ইন্টার্ভিউ দিতে ওর বস ওর অর্ধ নগ্ন শরীর আর প্রায় উন্মুক্ত স্তন যুগল দেখেই বুঝে গিয়েছিল একে না নিলে তার অফিস আগামি বছরও টার্গেট পূরণ করতে হমসিম খাবে।

 অনুমিতা এখন একজন সফল বিজনেস উওমান। তার মনে কোনও দুঃখ নেই। শুধু মাঝে মাঝে বড্ড মিস করে আগের অনুমিতা কে। সে এখনও ছোট চুল রাখতেই পছন্দ করে। কারন লম্বা চুল সে রাখত যার জন্যে সেই মানুষটা অনেকদিন আগেই হারিয়ে গেছে। এখন এই তার জীবন। এতেই সে এখন অভ্যস্ত। তার আর কান্না পায় না।

3 comments:

  1. Ekta bhalo ma ke nie golpo lekho to bhai

    ReplyDelete
  2. We want more 18+ stores .........plz plz plz post it soon

    ReplyDelete