Friday, September 26, 2014

পরিবর্তন (১৮+)

পরমা চক্রবর্তী একটি কলেজের বাংলার প্রফেসার। মার্জিত রুচিসম্পন্ন গম্ভীর ব্যক্তিত্বের আড়ালে 'সুন্দরী' উপমা টি তার ক্ষেত্রে যেন ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকে। কারণ সে একজন প্রফেসার। এমনটাই অন্তত সে ভাবত নিজের ব্যাপারে। তাই সে সুন্দরী হলেও কোনও ছাত্র তার সঙ্গে ফাজলামি করার সাহস দেখাত না। হাল্কা রঙের শাড়ি মানানসই সাজপোশাক, কপালে বড় টিপ, ও ঘাড়ের কাছে বড় খোঁপা বা লম্বা বেণি করে যখন সে ক্লাসে ঢুকত ছাত্র- ছাত্রী দের চরম কলাহলও নিমেষে থেমে যেত তাকে দেখে। সারাদিন এই পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে যখন সে সন্ধ্যে বা ভোর বেলায় যখন ছাদে একা থাকতো তখনও যেন নিজেকে সেই খলসের মধ্যেই অনুভব করত। এই খোলসের মধ্যে থাকতেই সে অভ্যস্ত। তবে সে যে সুন্দরী সেটা সে ভালোই জানত। তার কাছে সৌন্দর্য মানে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক, যেমন বুনোফুল। কৃত্রিম সার দেওয়া বাগানের গোলাপেরও যে সৌন্দর্য আছে সেটাকে সে সুন্দর ভাবতে জানে না। তাই নিজেকেও চিরকাল কৃত্রিম সাজ থেকে দূরে রাখত যতটা সম্ভব। তার প্রমাণ তার হাঁটু ছুঁই ছুঁই একঢাল ঘন কালো লম্বা অল্প কোঁকড়ানো চুল। পৃথিবীতে ওই একটি জিনিস তার চোখে সবচেয়ে সুন্দর। পরম আদরে লালন করত সে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে কাটাত আয়নার সামনে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে অনেক্ষন ধরে আঁচড়াত, নাড়ত চাড়ত। যেন পরম আনন্দে খেলা করত। কিন্তু কখনও খেয়াল করেনি বিল্টু তাকে লক্ষ্য করত আড়াল থেকে।

   পরমা যে সুন্দরী সেটা আগেই বলেছি। ৫'৬" লম্বা ফরসা সুঠাম সুশ্রী চেহারা। তার চুলের বর্ণনা আগেই দিয়েছি। তবে সেই বর্ণনায় তার সৌন্দর্য কিছুই তুলনা করা যায়না। বিল্টুর ও যে সেই চুল এত পছন্দ তাতে আর তার দোষ কি। তার মায়ের এই লম্বা ঘন কালো মখমলের মত চুল তাকে এতটাই আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল যে সে স্বপ্নেও নিজের মাকেই দেখতে পেত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে, কিম্বা কখনও কখনও নিজেকেও ভাবত মায়ের চুল দুহাতে নিয়ে সাড়া গায়ে মাখছে সেই নরম পশমের কমলতা। তার সারা শরীর দিয়ে অনুভব করছে। আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলত কল্পনার জগতে যেখানে সে মায়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ত।ইন্টারনেটে খুঁজে বেড়াতো তার কল্পনার জগত। আর সেসব আবর্জনা জড়ো করত নিজের কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে। তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাথরুমে কাটিয়ে অবশেষে মোহ কাটলে ভীষণ অপরাধি ভাবতো নিজেকে। কিন্তু আবার নিজের মাকে খোলা চুলে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারত না, আবার ফিরে যেত নিজের পুরনো জগতে। এই চাপে দিন দিন সে অবসাদে ডুবে যাচ্ছিলো। কিন্তু কোনোদিন কাউকে জানতে দেয়নি। পরমা ও জানার চেষ্টা করেনি এতদিন তার নিজের ছেলের মানসিক সমস্যাগুলো। চিরকাল নিজের খোলসেই ঢুকেছিল সে। নিজের অজান্তেই পরক্ষে সে নিজেই নিজের সন্তানের সর্বনাশের কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।

    পরমার স্বামী বিস্বম্ভর তার ব্যাবসা নিয়ে ব্যাস্ত। সে বিশেষ নজর দিতে পারে না সংসারে। আর ছোট্ট সংসারে প্রয়োজনও হয় না। পরমা সামলে নেয় সব। কাজের লোকও আছে দুজন। সকালে সন্ধ্যে কাজ করে যায়। কলকাতার দামী ফ্লাটে দুজনের আয়ে সচ্ছল ভাবেই চলে যায়।

  বিল্টুর বয়েস ১৭ পরমার একমাত্র সন্তান।ভালো নাম বিকাশ।একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এই বছরই অ্যাডমিসান নিয়েছে। বিল্টুর ঘর আলাদা। ওর ঘরে কাজের মেয়ে দিনে দুবার ঝাঁট দেওয়া আর একবার মোছার জন্য ঢোকে। সেটা বিল্টু জানে। তাই কখনও অতিরিক্ত নিরাপত্তার কথা ভাবেনি সে। আর মা বাবার ল্যাপটপ আছে। তার কম্পিউটারে যে পাসওয়ার্ড দেওয়া উচিৎ সেটাও সে কখনও অনুভব করেনি।

    ব্যাপারটা যখন প্রথম পরমার নজরে পরে তখন নিজেকে সামলাতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগেছিল তার। কাউকে কিছু বলেও নি সে। বিল্টু সেদিন কলেজে গিয়েছিল। পরমার ল্যাপটপে কিছু গোলমাল হওয়াতে ভেবেছিল বিল্টুর কম্পিউটারে মেলটা একবার চেক করবে। তাতেই ব্যাপারটা পরমা প্রথম জানতে পারে। এই ধরনের কোনও বিপদে যে তাকে পরতে হতে পারে সেটা সে আগে ভাবেনি। ব্যাপারটা জানার পর থেকে সে সজাগ হয়ে বিল্টুকে বেশ কিছুদিন ভালো করে লক্ষ্য করে সমস্যাটা কতটা গভীরে পৌঁছেছে বুঝতে পেরেছিল।

  সেদিন ছিল শনিবার। পরমার কলেজ সেদিন ছুটি ছিল। সকাল বেলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিল। আর আড় চোখে লক্ষ্য করছিলো বিল্টুও তাকে দেখছে খাটের পাশটায় বসে। বয়ঃসন্ধির সময় যে সন্তানের বন্ধু হতে হয় সেটা সে জেনেছে সমস্যাটা জানার পর তার এক মনবিদ বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে। আর এইসময় যে বেশি বকাঝকা করলে সেটাও সে জেনেছে তার কাছ থেকেই। তাই নিজেকে সামলে রেখেছে অনেক কষ্টে। যার ভয়ে গোটা কলেজের ছেলে মেয়ে কুঁকড়ে থাকে তার নিজের ছেলে কিনা...ছিঃ। তবে তার বন্ধু যে সমাধান বলেছে সেটা তার কাছে মেনে নেওয়া অসম্ভব মনে হয়েছিল। কিন্তু বন্ধু তাকে বুঝিয়েছে, এ ছাড়া বিল্টুকে শোধরানোর আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু কিভাবে কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিল না পরমা। শুধু বিল্টু কে দেখছিল আর যত দেখছিল তত তার মাথা গরম হয়ে উঠছিল।

  বিল্টু এতক্ষণ বসেছিল খাটের পাশে। এবার উঠেছে। পরমা বুঝতে পারছে বিল্টু বাথরুম যাচ্ছে। পরমা চিরুনি রেখে বিছানায় বসল। প্রায় আধঘণ্টা পর বিল্টু বেরল বাথরুম থেকে। পরমা ডাকল,

- "বিল্টু শোনো"
বিল্টু ঘরে ঢুকল। ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন খুব ক্লান্ত। বুঝতে বাকি কিছুই ছিল না পরমার। গম্ভীর গলায় আদেশ বেরল ওর মুখ থেকে,
- "এখানে বোসো"
বিল্টু বসল। মুখ নিচের দিকে। পরমা অধৈর্য হয়ে উঠে দাঁড়াল। খোলা চুল টা জড়িয়ে নিলো। ঘাড়ের কাছে একটা বড়সড় রেসমের বলের মত ঝুলে রইল খোঁপাটা। পরমা বলতে শুরু করলো,
- " কি চাও তুমি? তোমার কম্পিউটারে আমি দেখেছি। কি ওগুলো... " আরও বলতে যাচ্ছিলো, বিল্টু কেঁদে ফেলল। পরমা এটা আশা করেনি। ঘাবড়ে গেল বিল্টুর কান্না দেখে। ওর খোলস টা যেন হঠাৎ উধাও হয়ে গেল বিল্টুর কান্না দেখে। ওর পাশে বসল পরমা। ওর গলা অনেক নরম হয়ে এসেছে। বিল্টুর মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। বিল্টু এক ঝটকায় জড়িয়ে ধরল ওকে। অঝোরে কেঁদে চলেছে সে। পরমা এবার বলল,
- "কি চাই তোর? আমায় বল, কেন দেখিস ওসব তুই?"
বিল্টু এবার কথা বলল, ওর কান্না থেমেছে।
- "আমি জানি না মা। তোমার চুলটা দেখলেই আমার..."
পরমা কোনও কথা বলল না। শুধু বিল্টুর মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। ও বুঝতে পেরেছে ওর কি করা উচিৎ। কিছুক্ষণ পর সব শান্ত হলে বিল্টু কে বলল তৈরি হয়ে নে। আমরা বেরবো। বিল্টু জিগ্যেস করলো, "কোথায়?"
- " আমি চুল কেটে ফেলব, তুই আমায় নিয়ে যাবি।"
বিল্টু চমকে উঠল একটু। ও নিজেও অনেকবার মাকে কল্পনা করেছে, গলায় সাদা কেপ জড়ানো, মায়ের চোখে জল পড়ছে, তবু ও থামছে না নিজের হাতে কেটে ফেলছে মায়ের চুল। একদম ছোট বয়কাট। টি ভি তে যে মেয়েটা খবর পরে ঠিক তার মত। ওর আজ যেন একটু সাহস হল। বলল,
- "মা, তোমার চুল যদি আমি কাটি? প্লিজ না বোলো না। আমি কথা দিচ্ছি আর ওসব আমি দেখব না। মন দিয়ে পড়াশোনা করব।"
পরমা এবার হাসল। বুঝল সমস্যা এখন সমাধানের পথে। আতদিন নিজেকে দিদিমণি ভেবে এসেছে। আজ প্রথম মা ভাবতে ভালো লাগছে নিজেকে। ছেলের জন্যে এটুকু করতে পারবেনা সে? বলল ঠিক আছে। বিল্টূ কে এত খুশি দেখেনি সে কোনোদিন। বিল্টুকে বলল, "বল আমি কি করব। কোথায় বসব? বরং তোর ঘরে চল।"
 বিল্টু অবাক, আজ কি সে স্বপ্ন দেখছে? তারাতারি সব ব্যাবস্থা করতে লাগলো সে। নিজের ঘর পরিস্কার করে ঘরের মাঝে একটা টুল রাখল সে। একটা সাদা কাপড় জোগাড় করলো চুল কাটার সময় মায়ের গায়ে জড়ানোর জন্য। বাবার সেভিং কিট কাঁচি চিরুনি সব জড়ো করলো টুলটার কাছে। 

  পরমা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিল। চুলের গোছা সামনে নেওয়া। নিজেকে আজ বড় কুৎসিত লাগছে তার। কি করতে চলেছে সে। কিছুই জানে না। সোমবার যখন কলেজ যাবে তাকে দেখে লোকে হাসবে। কিন্তু কোনও উপায় নেই তার। ওর মুখ চোখ দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোন অজানা শত্রু তার সর্বস্ব লুঠ করে নিতে চলেছে। যেন সর্ব সমক্ষে উলঙ্গ করে দেওয়া হবে আর একটু পরেই। না, সব চুল সে কিছুতেই কাটবে না। খুব জোর চার আঙ্গুল, আট আঙ্গুল, আচ্ছা বেশ খুব বেশি হলে কোমর অব্দি। তার বেশি না। সে তখনও জানে না, বিল্টু ঠিক তখনই ট্রিমার টা চালিয়ে টেস্ট করছে তার জন্যে।পরমা আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না আয়নায়, চুলটা তুলে খোঁপা করে নিলো। আরও মিনিট দশ কাটল। চমক ভাঙল বিল্টুর ডাকে, "মা, এসো।"

  পরমা গিয়ে ঢুকল বিল্টুর ঘরে। বিল্টু মাকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল যাতে কেও ওদের বিরক্ত না করে। পরমাকে দেখে মনে হচ্ছিল না যে ও স্বেচ্ছায় মেনে নিচ্ছে এই ব্যাবস্থা। যেন ওকে জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছিলো এমন একটি ঘরে যেখান থেকে সে যখন বেরোবে ততক্ষনে তার মান সম্মান শরীরের আচ্ছাদনটুকু লুঠ করে নেবে কেউ। তবু ওকে ঢুকতেই হবে ওই ঘরে। এছাড়া আর কোনও উপায় নেই ওর। বিল্টূ ওকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে টুল টায় বসিয়ে দিল। পরমার শরীরে যেন প্রাণ নেই। বিল্টু সাদা কাপড় টা জড়িয়ে দিচ্ছে ওর গলায়। তারপর হাত পড়ল ওর খোঁপায়। পরমার শরীরে শিহরণ খেলে গেলো। বিল্টুর শরীরও স্থির নেই। মায়ের নরম চুলের খোঁপায় হাত দিয়ে ওর বুক উত্তেজনায় কাঁপতে শুরু করেছে। ওর পক্ষে মাথার ঠিক রাখা অসম্ভব হয়ে উঠল। এতদিন যা সে স্বপ্নে দেখে এসেছে আজ তা বাস্তবে পেয়ে সে সব ভুলে গেলো। সে ভুলে গেলো একটু আগে কি ঘটেছে। খালি তার মনে হতে লাগলো এতদিন যে সব মডেল দের সে কম্পিউটারে দেখে এসেছে তাদেরই একজন তার সামনে বসে আছে। এবং তাকে নিয়ে সে যা খুশি করতে পারে। সে পাগোলের মত খেলা করতে লাগলো মায়ের চুল নিয়ে। প্রথমে খোঁপাটা দুহাতে নেড়ে চেড়ে দু হাতে টিপে শেষে নাক ডুবিয়ে গন্ধ শুঁকতে লাগলো। পরমা বুঝতে পারলো না বিল্টু কেন এমনি করছে। কিন্তু তার খালি মনে হতে লাগলো বিল্টু এখন যা চাইছে তা না পাওয়া অব্দি ওর মন শান্ত হবে না । তাকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে গেলে সে যা চাইছে তাই দিতে হবে । নয়ত সে তলিয়ে যাবে এক অন্ধকার জগতে। তাই সে চুপচাপ বসে রইল। আর নিজেকে পুরোপুরি বিল্টুর হাতে ছেড়ে দিল। বিল্টুর তখন মাথার ঠিক নেই। ততক্ষনে খোঁপাটা খুলে ফেলেছে সে। ঘন কালো মখমলের মত নরম কালো চুল মেঝে অব্দি ঝুলে রয়েছে, ঢেকে ফেলেছে পরমার গোটা শরীর। আর বিল্টু দুহাতে নিয়ে খেলা করছে, গায়ে মাখছে সেই পশম। হঠাৎ বিল্টুর মনে হল এই চুল তো মা কেটেই ফেলবে একটু পরে। তারপর আর হয়ত কোনোদিন এমন চুল নিয়ে সে খেলা করতে পারবে না। সুতরাং আজই তার সুযোগ। সে যা প্রাণ চায় আজ করতে পারে মাকে নিয়ে। তার খুব ইচ্ছে হল চুল কেটে ফেলার আগে ওই চুল সে নিজের হাতে শ্যাম্পু করে দেবে। শুধু তাই নয় তার ইচ্ছে হল এতদিন যা কল্পনা করে বাথরুমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছে আজ তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে আনন্দ নেবে। এই ভাবনাতেই তার এত আনন্দ হল যে তার মনেও রইল না ওই মহিলার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক। কাম এমন এক জিনিস যা একবার যখন মানুষের মাথায় ভড় করে তখন আর দিগ্বিদিক জ্ঞান থাকে না। বিল্টুর ও তাই হল। তবে এর ফলে পরমা কে যে যন্ত্রণা সহ্য করতে হল তার জন্যে কিছুটা হলেও পরক্ষে পরমা নিজেই দায়ী সেটা সে মনে মনে ততক্ষণে মেনে নিয়েছিল। কোনোদিন বিল্টুকে সময় না দেওয়ার ফলে যে দুরত্ব তৈরি হয়েছিল তার ফলেই আজ বিল্টু ভুলে গিয়েছিল ওই মহিলার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক। সে খালি পরমার মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলো সেই মডেল দের যাদের সঙ্গে নিজের মায়ের তুলনা করে সে এতদিন উত্তেজিত হয়েছে। আজ সে কিছু বাদ রাখবে না। মনের সব ইচ্ছা সে আজই পূরণ করবে। পরমাও মনে মনে তাই ই চাইছিল যদিও, সব যন্ত্রণার আজই অবসান হোক, তবু বিল্টুর এ হেন আচরণ সে আশা করেনি। বিল্টু এতক্ষণ ওর চুল নিয়ে খেলা করছিলো সেটা পরমা ওর ছেলেমানুষী ভেবেছিল। বিল্টুর ঘরের লাগোয়া একটা বাথরুম ছিল যেটা বিল্টু মাঝে সাঝে রাতের দিকে ব্যাবহার করত, খুব ছোট যদিও তবু একজনের পক্ষে যথেষ্ট ছিল। বিল্টু এবার পরমার লম্বা চুল ভালো করে পেঁচিয়ে গোছ করে ডান হাতে গুছিয়ে ধরে পরমাকে বলল "বাথরুমে চল।" পরমা মারাত্মক অবাক হয়ে গেলো এবার। প্রতিবাদ করবে কিকরে, তার চুলের গোছা বিল্টু শক্ত করে ধরে আছে। সে ঘাড়ও নাড়াতে পারছে না। চিৎকার করবে? লোকে কি বলবে? দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। এখন বিল্টুর কথা মানা ছাড়া কোনও উপায় নেই। সে প্রথমে বিল্টু কে ধমক দেওয়ার চেষ্টা করলো। ফল হল বিল্টু এক হ্যাঁচকা টান মেরে তাকে টুল থেকে প্রায় দাঁড় করিয়ে দিল। পুরোপুরি দাঁড়াতেও পারলো না সে। চুলে হঠাৎ হ্যাঁচকা টান পরায় মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল, ফলে দুহাতে মাথা ধরে বিল্টুর হাতে ধরা চুলের গোছা থেকে প্রায় ঝুলে রইল। বিল্টু ডান হাতে চুলের গোছা আর বাঁ হাতে পরমার বাঁ কনুই টা ধরে তাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিল। পরমা বেশিক্ষণ দাঁড়িয়েও থাকতে পারলো না। মাথা ঘুরে বসে পড়লো মাটিতে। বিল্টু তখনও ধরে ছিল চুলের গোছা। পরমা এবার কেঁদে ফেলল। কাকুতি মিনতি করতে লাগলো আর অঝোরে কাঁদতে লাগলো। মজা হল এই, যে সে যত কাঁদতে লাগলো বিল্টুর পৈশাচিক আনন্দ যেন তত বেড়ে যেতে লাগলো। এই তো চেয়েছিল সে। আজ সে সত্যিই কিছু বাদ রাখবে না।

  পরমার গলায় তখনও সাদা কাপড়টা জড়ানো ছিল। বিল্টু চুলের গোছাটা ছেড়ে দিয়ে একটানে সেটা খুলে ফেলল। তারপর নিজের প্যান্ট খুলে ফেলে ওই চুলের গোছায় তার যৌনাঙ্গ ডুবিয়ে পরম আনন্দের তার চেনা খেলায় লিপ্ত হল। পরমা ছেলের অর্ধনগ্ন শরীরের সামনে মাথা নিচু করে সেই কাম যন্ত্রণা যেন মাথা পেতে গ্রহন করছিলো। তবু যেন তার মনে হচ্ছিলো এতেই যদি বিল্টু শান্ত হয় তবে তাও সে আজ মেনে নিতে রাজি আছে। তবে ওই চুল সবটুকু কেটে ফেলতে তার যে একটু আগে কষ্ট হচ্ছিলো সেটা আর হচ্ছিলো না। খালি মনে হচ্ছিলো ওই আপদ বিদেয় হওয়াই ভালো। যা দেখে নিজের ছেলে কামুক হিংস্র পশু তে পরিণত হয় সেই সৌন্দর্য তার চাই না। করুক যা প্রাণ চায় বিল্টুর, যা হয় হবে।

   কতক্ষন পেরিয়েছে পরমা জানে না। সে মাথা নিচু করেই বসেছিল। তার চোখ দিয়ে সমানে জল পড়ছিল। সে এবার অনুভব করলো বিল্টু ঠাণ্ডা হয়েছে। কিন্তু তাতে পরমার দুর্গতি শেষ হল না। বিল্টু এবার আবার তাকে দাঁড় করিয়ে তার গা থেকে সত্যিই শাড়ি সায়া ব্লাউজ খুলে নিলো। তারপর নিজের টি শার্ট টাও খুলে ফেলে অন্তর্বাস পরা অবস্থায় আবার পরমার চুলের মুঠিটা ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে বাথরুমে ঢুকিয়ে নিজেও ঢুকে বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল। আগামী দেড় ঘণ্টা পরমার গোঙানির আওয়াজ চাপা পরে রইল অন্ধকার বাথরুমের ভেতর। ঘণ্টা দুয়েক পর যখন বাথরুমের দরজা খুলল পরমার শরীরে আর কোনও ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই। অন্তর্বাস টুকুও নেই শরীরে। যেন একটি জীবন্ত মৃতদেহ। বিল্টু বিকৃত কামকে শান্ত করে তারপর পরমার চুল শ্যাম্পু করে দিয়েছিল প্রানভরে পরমার শরীরের কোনও অংশ বাদ দেয়নি সাবান ঘষতে। বাথরুম থেকে বেরোনোর পর পরমার অবসন্ন নগ্ন ভিজে শরীর টা এনে কোনওরকমে চিত করে শুইয়ে দিল বিছানায়। পরমার মাথা ঝুলে রইল বিছানার ধারে। আর তার ঘন লম্বা ভিজে চুল এলিয়ে ছড়িয়ে পড়লো বিছানা থেকে মেঝে অব্দি অনেক খানি জুড়ে।

  বিল্টু ওই অবস্থাতেই মাটিতে বসে পড়লো। সে বুঝতে পারছে না আজ কি হচ্ছে। হাঁপিয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু ক্লান্তির থেকেও গোটা শরীরে কি যেন উত্তেজনা অনুভব করছিল সে। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল মাটির দিকে তাকিয়ে। পরমাও কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে ততক্ষণে। কিন্তু সারা শরীরে যন্ত্রণা ছাড়া কিছুই অনুভব করতে পারছিল না। পুরোটাই তার মনে হচ্ছিল একটা দুঃস্বপ্নের মত। উঠে বসল সে বিছানায়। তার শরীরে তার লম্বা চুল ছাড়া আর কোনও আচ্ছাদন নেই। লজ্জাও আর নেই। এবার বিছানা থেকে টলতে টলতে নেমে দাঁড়াল। এইসময় বিল্টু মুখতুলে তাকাল একবার তার দিকে। দুজনের চোখে চোখ পড়লো। আর পরমার দিকে তাকাতেই বিল্টুর আবার কি ্যেন হয়ে গেলো। পরমার ভিজে উলঙ্গ শরীর জুড়ে প্রায় হাঁটু অব্দি ঝুলে থাকা এলোমেলো ভিজে চুল আর ঘোলাটে দৃষ্টি যে কোনও পুরুষ কেই সেই সময় পাগল করে দিতে পারে, বিল্টুর আর কি দোষ। সেও উঠে দাঁড়াল। কম্পিউটারের সামনে চেয়ারটা টেনে এনে তারপর পরমার ডান হাতের কনুইটা ধরে টেনে বসিয়ে দিল চেয়ারে। পরমা কোনও প্রতিবাদ করলো না। তার আর কিছু বাকিও ছিল না বিশেষ খারাপ লাগার মত। বিল্টু আবার তার চুলে হাতদিল। এবার আর আগের মত হাত কাঁপছিল না। এবার অন্য উত্তেজনা অনুভব করছিল। বেশ যত্ন করে এলোমেলো চুলগুলো মাথার পিছনে জড়ো করে আবার গোছা করলো। তারপর হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নেড়ে চেড়ে শুকোলো চুলের গোছাখানা। সদ্দ শ্যাম্পু করা নরম শুকনো চুলের   স্পর্শ লাগছিল তার যৌনাঙ্গে তাতেই সেটা আবার শক্ত হয়ে উঠল। অনেক্ষন চুলটা মাসাজ করলো। তারপর সেই অবস্থাতেই চুলের গোছাটা বেশ ভালো করে আঁচড়ে রাবার ব্যান্ড দিয়ে একটা পনিটেল করলো উঁচু করে। এতক্ষনে তার নজর পড়লো পরমার বাকি শরীরের দিকে। কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। তার মাসাজের কারনেই হোক আর ক্লান্তিতেই হোক পরমার মাথা এলিয়ে পড়েছে পেছন দিকে। আর চেয়ারের পিছনে প্রায় মেঝে অব্দি ঝুলে রয়েছে সেই আশ্চর্য সুন্দর চুলের গোছা। লক্ষ্য করলো চুলের গোছাটা যেটা এতদিন কালো মনে হত, সেটা ঠিক কালো নয়। বরং গাঢ় তামাটে রঙের। পরমার ফরসা উলঙ্গ শরীরে গোলাপি মুখে আর মাথার পেছনের তামাটে রঙের লম্বা চুলের গোছায় তাকে বিল্টুর পর্ণ মডেল ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছিল না। তবু কি যেন একটা খুঁত রয়েছে। ঠিক নিখুঁত মডেল দের মত নয়। বিল্টুর মনে হল চুলের গোছাটার আগা অসমান এবড়ো খেবড়ো। কাঁচি টা তুলে নিয়ে সমান করলো ডগাটা। এই প্রথম পরমার চুলের টুকরো আলাদা হয়ে মেঝেতে পড়লো। যদিও সে সামান্যই। বড়জোর এক ইঞ্চি হবে। হ্যাঁ, এইবার নিখুঁত হয়েছে গোছাটা। তার আরও ইচ্ছে হল পরমার কপাল টাও চুলে ঢেকে দিতে। যেমন সে দেখেছে ছবিতে মডেল দের। সে পনিটেল টা খুলল। মাথার সামনের চুল মাথার তালুর মাঝ অব্দি আলাদা করে বাকি পিছনের চুল আঁচড়ে আবার পনিটেল করলো। তারপর সামনে এসে পরমার সামনের চুল মুখের সামনে আঁচড়াল। লম্বা চুলে পরমার শরীরের সামনের অংশ ঢাকা পরে গেলো তারফলে। বিল্টু এবার সুন্দর করে ভ্রুর নিচ অব্দি সমান করে নিখুঁত করে ছেঁটে ফেলল সেই চুল। লম্বা চুলের টুকরো গুলো পরমার উন্মুক্ত স্তন বেয়ে ঝরে পরছিল কোলে দুই উরুর ফাঁকে। ব্যাং কাটা হলে চুলের টুকরো গুলো যত্ন করে সরিয়ে রাখল বিল্টু। কিন্তু তবু, কি যেন চোখে লাগছে। চেয়ার টা এবার নিজের দিকে ঘুড়িয়ে লক্ষ্য করলো পরমার শরীরে অবাঞ্ছিত চুল বগলে ও যৌনাঙ্গে। শেভিং কিট টা কাছে এনে নিখুঁত ভাবে শেভ করলো সেগুলো। পরমার বোধবুদ্ধি লোপ পেয়েছে, সে কোনও প্রতিবাদ করলো না। এমন কি বিল্টু যখন তার হাত টা তুলে ধরছিল সে যেন নিজের অজান্তেই সহযোগিতা করছিল তাকে। যেন মাদকাসক্ত কোনও সুন্দরী রমণী। প্রায় আধঘণ্টা পর কাজ শেষ হলে এবার বিল্টু পরমার দিকে তাকিয়ে বুঝল আর তার পক্ষ্যে নিজেকে সামলানো অসম্ভব। এই শরীর যেন তাকে ডাকছে। সে আর সামলাতে পারলো না। পনিটেল টা ধরে পরমাকে দাঁড় করিয়ে তার শরীর টা সামনে ঝুকিয়ে আবার সে লিপ্ত হল কাম লীলায়। দাঁড়িয়ে, চেয়ারে বসে পরমাকে কোলে বসিয়ে, শেষে বিছানায় শুয়ে আড়াই ঘণ্টা ধরে ভোগ করলো সেই শরীর। শেষে যখন বিল্টুর হুঁশ হল ততক্ষণে সে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে আর পরমা তার যৌনাঙ্গের ওপর বসে নিজেই উন্মাদের মত লাফাচ্ছে। পরমা সমস্ত লাজ লজ্জা বিসর্জন দিয়ে নিজেকে রুপান্তরিত করে ফেলেছে ওর দেখা সেই মডেল দের একজনে। যার প্রধান উদ্দেশ্য তার যৌন সঙ্গী কে চরম সুখের উপলব্ধি করানো। তারপর যা ঘটল তাতে বিল্টু শুধু অবাক হল না, ভয় পেলো যেন। চরম মুহূর্তে পরমা তার যৌনাঙ্গে মুখ দিয়ে চেটেপুটে সব যৌনাঙ্গ নিঃসৃত রস সবটুকু পান করলো। তারপর বিল্টু কে হাত ধরে তুলে তার যৌনাঙ্গ ধরে নিয়ে চলল সেই টুলটার দিকে। আর সে বিল্টুর দিকে তাকিয়ে এমন এক কামুক হাসি হাসছিল যে হাসি বিল্টু দেখেছে, কিন্তু পরমার মুখে নয়। পরমাও কোনোদিন হাসেনি সেরকম হাসি। যেন সে এক বারাঙ্গনা আর তার প্রথম খরিদ্দার বিল্টু। এবার পরমা টুলটায় বসল আর কাঁচি টা তুলে বিল্টুর হাতে দিয়ে নিজে তার দিকে পিছন ফিরে বসল। যেন বলতে চাইল নাও এবার আসল কাজ শেষ কর। বিল্টুর মনে পড়লো সেই খবর পরা মেয়েটার কথা। সে যেমন দেখতে চেয়েছিল পরমাকে। বিল্টু প্রথমেই পনিটেল টা আলাদা করল পরমার শরীর থেকে। তারপর ট্রিমার তুলে নিলো। প্রায় আধঘণ্টা পর উন্মত্ত খেলা যখন শেষ হল তখন পরমার মাথার চুল বড়জোর দু ইঞ্চি বাকি আছে। ঘাড় আর দু কানের পাশে চুল প্রায় নেই বললেই চলে। ঘাড় থেকে মাথার ওপর অব্দি চুল ক্রমশ বড় হয়ে মাথার ওপর দু ইঞ্চি লম্বা। মাথার সামনের ব্যাং তখনও তেমনি। বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। এরপর দুজনে জামা কাপড় পরে যখন ঘর থেকে বের হল তাদের নিজেদের সম্পর্ক আগের মত তো নেই ই বরং যেন বদলে গেছে দুজনেই। দুজনেই যেন খুব খুশি।

 পরমা নিজেকে আয়নায় দেখল। বেশ দেখাচ্ছে তাকে। আজকাল কার মডার্ন বাংলার ম্যাডাম।

 পরের যেদিন সে কলেজে ঢুকল সবাই তাকে দেখে যথেষ্ট অবাক হল। আরও অবাক হল যখন দেখল পরিবর্তন শুধু পরমার শরীরে হয়নি। এই দুদিনে যেন মানুষটাই বদলে গেছে।

Monday, September 22, 2014

চাকরি

অনুমিতার আর কান্না পাছিল না। সারারাত ঘুম হয়নি তার। শুধু কেঁদেছে, আর ভেবেছে কি দোষ করেছিলো সে যে ভগবান তাকে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে? দু মাসের কচি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে খালি তার চোখ জলে ভরে আসছিল। কি করা উচিৎ তার কিচ্ছু বুঝতে পারছিল না সে। আজকের বাজারে ওরকম মাইনের একটা চাকরি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সবে দেড় মাস হল তার স্বামি মারা গেছে। এখন ঐ চাকরি যদি সে নেয় লোকে কি বলবে? দেবযানীকে বলেছিল সে কথা। তার উত্তরে দেবযানী তাকে যে কথাটা বলেছিল সেটা তার মনে গভীর দাগ কেটেছিল। দেবযানী ওকে বলেছিল "যদি তুই খেতে না পাস, লোকে তোকে খাওয়াবে? তাহলে লোকের কথায় কান দিচ্ছিস কেন?" কথাটা খাঁটি। কিন্তু সে যে বিধবা। এখন কি সাজগোজ করা তাকে মানাবে?

   অনুমিতা অনাথ। সুপ্রিয় ওকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলো। সুখের সংসার টিকেছিল বছর দেড়েক। তারপরই হঠাৎ একটা অ্যাকসিডেন্টে সুপ্রিয় চলে গেল। জমানো টাকা তেমন কিছুই ছিল না। মাথার ওপর গুরুজন বলতে ননদ দেবযানী। সুপ্রিয় ওকে বলেছিল যে কোনও প্রয়োজনে দিদির সঙ্গে কথা বোলো। দিদি বড় কম্পানিতে চাকরি করে। একমাত্র ওই আমাদের শুভাকাঙ্খি। আর কাউকে বিশ্বাস কোর না। দেবযানী সাহায্য করেওছিল। ওরই কোম্পানিতে ভালো মাইনের একটা চাকরি দেখে দিয়েছিল সে। দেবযানীকে বলাতে সে ই ওর বস কে বলে রেখেছিল। অনুমিতাকে জানিয়েছিল সেলস এগজিকিউটিভের চাকরি। ওদের কম্পানির হয়ে অফিসে অফিসে গিয়ে ওদের প্রোডাক্ট সেল করতে হবে। অনুমিতা রাজি হতে দেরি করেনি। তারপর দেবযানী সব বন্দোবস্ত পাকা করে অনুমিতাকে বাকিটা বলেছিল ওর বাড়ি এসে। আর যা বলেছিল সেটাই মেনে নিতে পারছিল না অনুমিতা। ওই চাকরি করতে গেলে অনুমিতার শিক্ষাগত যোগ্যতা নাকি যথেষ্ট নয়। অনুমিতাকে হতে হবে কেতাদুরস্ত, যেন ক্রেতারা ওকে দেখে উৎসাহী হয় এমন সাজগোজ করতে হবে ওকে, এটাই চাকরি পাওয়ার একমাত্র শর্ত। এই শর্তে যদি রাজি থাকে অনুমিতা তবেই সে চাকরি পাবে নয়ত নয়। অনুমিতা কোনও উত্তর দিতে পারেনি। দেবযানী অনেক বোঝানোর পরও যখন দেখল অনুমিতা কেঁদেই চলেছে তখন সে আর কোনও ভাষা খুজে পায়নি। অবশেষে বলেছিল "ভেবে দেখ, কি ঠিক করিস কাল জানাস, আর হ্যাঁ হোক আর না ই হোক একবার বসের সঙ্গে দেখা করতে হবে তোকে, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে না গেলে ব্যাপারটা খারাপ হবে। হাতে সময় আছে দুদিন। ভেবে দেখ কি করিস।

   অনুমিতা সারারাত কেঁদেও কোনও কূলকিনারা পায়নি। সকালে শিশুটার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বুঝিয়েছিল, যে গেছে সে আর ফিরবেনা, এবার নিজেকেই সামলাতে হবে। তাই অতীতটাকে সরিয়ে রেখে ভেতরে ভেতরে নিজেকে শক্ত করছিল, লড়াই করার জন্যে। কিন্তু জতই ভাবছিল ততই চোখ ভরে আসছিল জলে। শেষে কপাল ঠুকে রাজি হয়ে গেল সে। মোবাইলটা তুলে নিয়ে দেবযানীর নম্বর ডায়াল করে বলে দিল সে রাজি। দেবযানী ওকে উৎসাহ দিল আর বলল সন্ধ্যে বেলা এসে সব বলে যাবে কি কি করতে হবে।

  ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় কলিং বেল বাজল। অনুমিতা ছেলেকে খাওয়াচ্ছিল। উঠে গিয়ে দরজা খুললো। দেবযানী ই এসেছে। ওকে দেখেই একগাল হাসল দেবযানী। অনুমিতাও একটু হাসার চেষ্টা করল। তারপর দুজনে ঘরে এসে বসল। দেবযানীই প্রথম কথা বলল।
 - "একদম ঠিক ডিসিশন নিয়েছিস তুই। কাজটা ভালো তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আর তুই তো কোনও বাজে কাজ করছিস না। কম্পানি ভালো। লোকজন ভালো। আর কাজের মধ্যে থাকলে মনটাও ভালো থাকবে।"
 - " আমায় এখন কি করতে হবে?"
 - " কিছু না। যা করার আমিই করে দেবো। তুই কোনও চিন্তা করিস না। কাল তৈরি থাকিস। সকাল দশটা নাগাদ আমি তোকে এখান থেকেই তুলে নেবো।"
অনুমিতা ঘাড় নাড়ল।

     *****************************************************************************

   অনুমিতা মামার বাড়িতে মানুষ। মামা মানুষটা কোনোদিনই সদাশয় ছিলেন না অনুমিতার প্রতি। ওকে বিদেয় করতে পেরে যেন শান্তি পেয়েছিলেন। ওর বিয়ের পর আর কোনও যোগাযোগ রাখেন নি। অনুমিতা দেখতে সুনতে মন্দ নয়। বি.এ পাশ। শরীরের গড়ন রোগাটে। উচ্চতা ৫' ৬", ফরসা বলা চলে। পাছা অব্দি একঢাল কুচকুচে কালো ঘন চুল। বড়বড় চোখ। সহজ সরল বুদ্ধিদিপ্ত মুখ। এক কথায় নারী হিসেবে আকর্ষণীয়। জীবন সংগ্রামের ছাপ স্পষ্ট।ওর সবথেকে যেটা আকর্ষণীয় তা হল ওর ওই লম্বা চুল। আজকালকার দিনে অত লম্বা সুন্দর চুল খুব একটা দেখা যায় না। তা অনুমিতা নিজেও জানে। ওর চুল ওর একরকম দুর্বলতা বলা চলে। কখনও এক ইঞ্চিও কাটেনি ওই চুল। সুপ্রিয়ও খুব পছন্দ করত ওই চুল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলা করত ওর চুলের গোছা টা নিয়ে। অনুমিতাও কখনও লম্বা বেণি কখনও উঁচু খোঁপা করে সুপ্রিয় কে দুষ্টুমি করার সুযোগ করে দিত। সুপ্রিয় যখন বিছানায় শুয়ে ওর চুল নিয়ে খেলা করত তখন ও ঘুমনোর ভান করে সবটুকু ভালবাসা অনুভব করত ওর চুল দিয়ে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে অনুমিতার সেই সব কথা মনে পরছিল। অনুমিতা তৈরি হচ্ছিল দেবযানীর সঙ্গে বেরোনোর জন্যে। কোথায় যাচ্ছে সে জানে না। যেখানেই যেতে হোক সে রাজি। যাই করতে হোক সে প্রস্তুত। জীবন বড্ড কঠিন শিক্ষক।

    ঠিক দশটা পাঁচে কলিং বেল বাজল। অনুমিতাও তৈরি। ছেলেকে পাশের ফ্লাটের রিতাদির কাছে দিয়ে সে বেরিয়ে এল। দেবযানীর কথা মত বলে এল ঘণ্টা তিনেক লাগবে, তার মধ্যেই ফিরে আসব।

    দুজনে গাড়িতে উঠল। দেবযানীই চালাচ্ছিল। আর আড় চোখে লক্ষ্য করছিল অনুমিতা কে। দেবযানীর পরনে ডার্ক ব্লু ডেনিম জিন্স আর স্কিন টাইট টপ। চোখে সানগ্লাস। সে লক্ষ্য করছিল দেবযানীকে আর কেন জানি অল্প হাসছিল ওকে দেখে। দেবযানী পরে ছিল সিল্কের শাড়ি। চুল টা লম্বা বেণি করে কাঁধ দিয়ে ঘুরিয়ে সামনে নিয়েছে। দুই হাঁটুর মাঝ দিয়ে সিটের নিচে চলে গেছে সেই বেণি, ডগা দেখা যায় না। ও আনমনে তাকিয়ে ছিল জানলার দিকে। দেবযানীই কথা বলল এবারও
 - "কি ভাবছিস?"
      অনুমিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,  "কিছু না।" তারপর একটু থেমে জানতে চাইল কোথায় যাচ্ছি আমরা?"
দেবযানী কেমন একটু নির্বিকার ভাবে উত্তর দিল " স্যালন " অনুমিতা একবার তাকাল ওর দিকে। লক্ষ্যহীন দৃষ্টি। কিছুই বলল না।

     মিনিট দশেকের মধ্যে তারা এসে পৌঁছাল একটা নামি লেডিস সালনের সামনে। গাড়ি পার্ক করে দুজনে ঢুকল। দেবযানী আগের দিনই অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছিল। ওই গিয়ে কথা বলল রিসেপ্সনিস্টের সঙ্গে। মিনিট দুয়েক পর ফিরে এসে বলল "আয়"।

     ওকে অনুসরন করে দুজনে পৌঁছাল পরের ঘরে। চারদিকে আয়না লাগানো ঝাঁ চকচকে পার্লার। জনা দুই মহিলা ট্রিটমেন্ট করাচ্ছেন। ঘুরে বেরাচ্ছে ইউনিফর্ম পরা সুন্দরী মেয়েরা। তাদেরই একজন এগিয়ে এসে দেবযানীকে ইংলিশে জানতে চাইল কি করাতে চায়। দেবযানী অনুমিতাকে দেখিয়ে দিয়ে বলল "এঁর একটা মেকওভার প্যাকেজ সিলেক্ট করেছিলাম" তারপর তাকে সব বুঝিয়ে দেওয়ার পর মেয়েটি অনুমিতাকে একটি চেয়ার দেখিয়ে দিল। দেবযানী চোখের ইশারায় অনুমিতাকে সেখানে বসতে বলল। অনুমিতাও বাধ্য মেয়ের মত বসল। সে লক্ষ্য করল মেয়েটি তার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম জড়ো করছে সামনের টেবিলে। সবার আগে যেটিতে চোখ পড়াতে অনুমিতার বুকটা ধড়াস করে উঠল সেটি হল একটি ছোট স্ট্যান্ডে ঝোলানো বিভিন্ন রকমের কাঁচি। আর ছিল কয়েকটি চিরুনি। বিভিন্ন রকম ও সাইজের বোতলে বিভিন্ন রকম প্রসাধন যার একটিও সে চেনে না। সে একবার ঘুরে দেবযানীকে দেখার চেষ্টা করলো। সামনের আয়নায় যে তাকে দেখা যাচ্ছে সেটা সে লক্ষই করলো না। ওকে ছটফট করতে দেখে দেবযানী এগিয়ে এলো।

 - " কিরে কি হল?"
 - " ওরা কি আমার চুল..."
প্রশ্নটা শেষ হল না। দেবযানী তার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল
 - "সে তো কাটবেই অনু। তুই কি চাস না? তাহলে বল আমরা ফিরে যাই। কিন্তু যব টা পেতে গেলে তোকে এটুকু তো পাল্টাতেই হবে। না?"
   অনুমিতা ছলছল চোখে একবার ওর দিকে দেখল। কিছু বলল না। তারপর অস্ফুটে বলল, " বেশি না প্লিজ।"
দেবযানী ওর কাঁধে আর একবার হাত দিয়ে চোখের ইশারায় ওকে আশ্বস্ত করে আবার পিছিয়ে এসে দাঁড়াল।

   ইউনিফর্ম পরা মেয়েটি ততক্ষণে এগিয়ে এসে ওর বেণীটা নেড়েচেড়ে দেখে সেটা খুলতে সুরু করেছে। যতক্ষণে গোটা বেণীটা খোলা হল একরাশ কালো মখমল চেয়ারের পেছন টা ঢেকে ফেলেছে। দেবযানী দেখছিল পেছনে দাঁড়িয়ে। ইউনিফর্ম পরা মেয়েটি ওকে জিগ্যেস করলো "লেংথ কি ছোট করবেন?" অনুমিতা বড় বড় চোখে ভয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে দেবযানীর দিকে । দেবযানী কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অনুমিতার চুলের দিকে তারপর তাকাল আয়নায় অনুমিতার দিকে। তারপর ওই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে এমন একটা ইসারা করলো যার মানে হ্যাঁ ও হয় আবার না ও হয়। মেয়েটি কি বুঝল তা অনুমিতা বুঝতে পারলো না। সে দম বন্ধ করে চোখ বন্ধ করে বসে রইল সব কিছু অদৃষ্টর ওপর ছেড়ে দিয়ে। মেয়েটি অনুমিতার গলায় একটা দামী কেপ জড়িয়ে দিল। তারপর চুলটা ভালো করে আঁচড়াতে লাগলো। মিনিট পাঁচেক আঁচড়ানোর পর অনুমিতা অনুভব করলো তার মাথায়, চুলে ঠাণ্ডা জল ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলল সে। মেয়েটি তারপর সামনের টেবিল থেকে একটি চিরুনি ও পছন্দসই একটি কাঁচি তুলে নিয়েছে। মেয়েটি এরপর তার পিছনের দিকে গেল। এরপর আর মেয়েটিকেও দেখা গেল না, কারন সে নিচু হয়ে প্রায় বসে পড়েছে চেয়ারের পেছনে। কিছুক্ষণ কুচ কুচ আওয়াজ পেলো অনুমিতা। ততক্ষণে ওর হৃৎস্পন্দন তিনগুন হয়ে গেছে। প্রায় মিনিট দেড়েক পর মেয়েটি দেবযানীকে জিগ্যেস করলো " এই লেংথ ঠিক আছে?" দেবযানী এগিয়ে এলো তারপর হাত দিয়ে একটা নির্দিষ্ট লেংথ ইশারায় বুঝিয়ে দিল মেয়েটিকে। অনুমিতা বুঝতে পারলো না সেটা ঠিক কতটা। তবে এটা বুঝতে পারলো তার এতদিনের ঐশ্বর্য আজকের পর আর তার থাকবে না। তবে সে বুঝতে পারলো তার আর ভয় করছে না। সব অনুভূতি লোপ পেয়েছে। কুচ কুচ কুচ কুচ আওয়াজ টা সমানেই হয়ে চলেছে তার পিছনে। এতক্ষণে কাঁচির আর চুলের সংঘর্ষ সে অনুভব করতে শুরু করেছে, কারন মাথায় অল্প অল্প টান অনুভব করছে। কাঁচির আওয়াজ টাও যেন অনেক ওপরে উঠে এসেছে। মেয়েটি আর অতটা নিচু হয়ে নেই। সামান্য ঝুঁকে রয়েছে মাত্র। মিনিট পনেরো পর যখন তাকে মেয়েটি শ্যাম্পু করানোর জন্যে নিয়ে যাচ্ছিলো আয়নায় দেখতে পেলো তার খোলা চুল যার ডগাটা এতদিন সে উরুর কাছে অনুভব করেছে তা কনুই অব্দিও যাচ্ছে না। বরং কাধের অল্প নিচেই শেষ হয়ে গেছে। তার আর কিছু মনে হল না। যদিও যন্ত্রণা অনেক বাকি ছিল তার। শ্যাম্পুর পর আবার যখন তাকে আবার সেই চেয়ারে এনেই বসানো হল এবং হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে যখন মেয়েটি তার চুল শুকিয়ে নিচ্ছিল তখন ড্রায়ারের গরম হাওয়ার চেয়েও গরম হয়ে উঠেছিল তার গাল কান। মেয়েটি তাকে বলল কানের দুল খুলে নিতে। সে দুল খুলে দেবযানীর হাতে দিয়ে দিল। এরপর মেয়েটি তার চুল নিয়ে যেন ছেলেখেলা শুরু করলো। তার ঘন চুলে কাঁচি আর চিরুনি যেন খেলা করে বেরাতে লাগলো। আর থোকা থোকা টুকরো টুকরো কাটা চুলের স্তূপ জমা হতে লাগলো তার কোলে কাঁধে ঝরে পরতে লাগলো মেঝেতে। যখন এই খেলা থামল তখন অনুমিতাকে প্রায় চেনা যায় না। তার বাঁ চোখ দু গাল কান থুৎনি অব্দি ঢাকা পড়েছে তার মাথার সামনের ভাগের চুলের বিভিন্ন লেয়ারে। আর পেছনের ভাগের সব থেকে লম্বা চুলের দৈর্ঘ্য কনরকমে তার ঘাড় ঢেকে রেখেছে। সামনের আয়নায় যে মেয়েটিকে আয়নায় অনুমিতা দেখতে পেলো সে দেখতে অনেকটা তার মত হলেও তার গাল অব্দি কেতাদুরস্ত চুলের ছাঁটে অমিলটাই বেশি ধরা পরে। একে সে আয়নায় কখনও দেখেনি।

   এরপর চুল কালার করতে আরও আধঘণ্টা লাগলো। কিন্তু তারপর আয়নার মেয়েটির সঙ্গে তার আর কোনও মিল ই খুজে পাওয়া যায় না। অনুমিতার ছিল উরু অব্দি ঘন কুচকুচে কালো চুল। আর ওই মেয়েটির গাল অব্দি লেয়ারড বাদামী চুল তার মাঝে সোনালী হাইলাইট। অসাধারণ সুন্দরী সে, পুরনো অনুমিতার মত স্নিগ্ধ নয়। তার রুপে যেন ছেঁকা লাগে। অবাক হয়ে অনুমিতা দেখতে লাগলো আয়নার নিজেকে। আগে রাস্তায় ওরকম সাজের মেয়েদের দেখে ও ভাবত নাজানি ওরা কোন গ্রহের মানুষ। আজ সে নিজেও ওদের একজন।

  এরপর আরও ঘণ্টা খানেক সে পার্লারে ছিল। তার মধ্যে আধ ঘণ্টা লেগেছিল সাড়া শরীরের লোম তুলতে। ওকে অন্য একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে অন্তরবাস বাদে বাকি সমস্ত জামা কাপড় খুলিয়ে অদ্ভুত একটা জামা পড়িয়ে সাড়া শরীরে আঠা মাখিয়ে টেনে টেনে লোম তুলছিল দুটি অচেনা মেয়ে। অনুমিতা অবাক হচ্ছিল। একটা চাকরি করতে তার শরীরে লোম আছে না নেই এই প্রশ্ন কতটা প্রাসঙ্গিক সে বুঝতে পারেনি।

 দুপুর দুটো নাগাদ যখন অনুমিতা রিতা দির কাছে গিয়েছিল ছেলেকে নিতে রিতাদি অবাক হয়ে তাকিয়েছিল ওর দিকে। কোনও কথা বলেনি।

 পরদিন যখন অনুমিতা হাইহিল, মিনি স্কাট আর ফরমাল টপ এ অফিসে ঢুকেছিল ইন্টার্ভিউ দিতে ওর বস ওর অর্ধ নগ্ন শরীর আর প্রায় উন্মুক্ত স্তন যুগল দেখেই বুঝে গিয়েছিল একে না নিলে তার অফিস আগামি বছরও টার্গেট পূরণ করতে হমসিম খাবে।

 অনুমিতা এখন একজন সফল বিজনেস উওমান। তার মনে কোনও দুঃখ নেই। শুধু মাঝে মাঝে বড্ড মিস করে আগের অনুমিতা কে। সে এখনও ছোট চুল রাখতেই পছন্দ করে। কারন লম্বা চুল সে রাখত যার জন্যে সেই মানুষটা অনেকদিন আগেই হারিয়ে গেছে। এখন এই তার জীবন। এতেই সে এখন অভ্যস্ত। তার আর কান্না পায় না।

Sunday, September 21, 2014

বন্ধু (২)

গল্প করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়লো। ঘড়িতে যখন সাড়ে পাঁচটা বাজে, ও উঠে বলল “এই বিকাল হল, চা খাবে?”। আমি বললাম “চা তো রোজই খাই এমন বিকাল কি রোজ রোজ আসে?” ওর লম্বা চুল তখনও আমার কোলের ওপর আমার অর্ধেক শরীর ঢেকে রয়েছে। আমার খুব ভালো লাগছিলো। আমি ওর চুলের গোছাটা ধরে আলতো করে টান দিয়ে বললাম “যেয়ো না প্লিজ।” ও বলল “আরে আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি? এখানেই তো আছি। তুমিও এসো রান্নাঘরে দুজনে চা বানাই। এসো।” তারপর আমার হাত ধরে টেনে তুলে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে নিজে গ্যাস জ্বালিয়ে চা করতে লাগলো। আমি ওকে দেখতে থাকলাম।
পড়নে আটপৌড়ে হলদে শাড়ী, সবুজ ব্লাঊজ। খোলা চুল ওর কাঁধ, ঘাড়, ওর কোমরের নীচ অবধি ঢেকে রয়েছে। দেখে মনে হয়না আদৌ কখনও কোনও বিশেষ যত্ন পেয়েছে। অথচ তবু কি সুন্দর, যেন প্রকৃতি সব সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে নিজে থেকেই। যত্নের অভাবে ওগোছালো, অসমান, ডগাগুলো এবড়ো খেবড়ো। কিন্তু কি নরম, যেন কাশ্মীরি পশম।
ওকে জিগ্যেস করলাম, “তুমি চুল কাটনি কতদিন?”
ও চা করতে করতেই উত্তর দিল “চুল আমি কোনোদিনই কাটিনি। আগে মা কাটতে দিতো না। বিয়ের পর আর কাটা হয়নি।”
আমি জিগ্যেস করলাম “কেন?”
-    “এমনই, আগে বিয়ের আগে একবার ইচ্ছে হয়েছিল স্টাইল করে কাটবো, পার্লার অবধি গিয়ে ফিরে এসেছিলাম”।
-    “কেন?”
-    “মায়া হয়েছিল। যদি খুব ছোটো হয়ে যায়, ভয়ে, একটু লজ্জাও লেগেছিল। লোকে কি বলবে”
আমি আর কিছু বললাম না ওকে দেখছিলাম পিছন ফিরে চা করছে ওর চুল ওর মাথা থেকে নেমে ওর ঘার, পিঠ, কাধ, কোমর নিতম্ব সব ঢেকে রয়েছে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন সব মেয়েরা রুপের পিছনে হাজার হাজার টাকা খরচ করছে তখন নাকি চুল কাটতে লজ্জা পায়, লোকে কি বলবে ওর লজ্জা ঢাকার জন্যে ওর চুলই যথেষ্ট ওকে এই অবস্থায় দেখে মনে হল না লজ্জা ঢাকার জন্যে ওর জামা কাপড় দরকার আমার মনে হল চুল টা যদি বাদ দিই তবে কি আর কিছু আছে ওর? ওর চা করা হয়ে গিয়েছিল দুজনে কাপ হাতে উঠোনে এসে বসলাম ওকে লক্ষ্য করছিলাম ওকে দেখতে কুৎসিত নয় যত্ন পেলে ওকে আর পাঁচটা মেয়ের থেকে ভালোই দেখাবে তাতে সন্দেহ নেই তবে অবশ্যই ওর চুলের সৌন্দর্য ওর শারীরিক সৌন্দর্য কে ছাপিয়ে যায় ওর আর কোনও গয়নার প্রয়োজন নেই কোনও সাজের প্রয়োজন নেই তখনই আমার মনে হল কেন নয়? কোনও সাজ ছাড়াই যাকে এত সুন্দর দেখায় সাজলে না জানি কেমন দেখাবে আচ্ছা ওর চুল অত লম্বা না হত? যদি নিজের দিকে নজর দিত, যদি নিয়মিত চুল কাটত বিভিন্ন স্টাইলে, কি ক্ষতি হত? কোন মহাভারত অশুদ্ধ হত যদি ওর চুল অত লম্বা না হত? আমি দেখতে চাই ওকে কেমন দেখাবে ঘাড় অব্দি স্টেপ কাট চুলে ওর লজ্জা, ভয়, আমি জানতে চাই না ওকে কাটতেই হবে নিজের মধ্যে একটা জেদ অনুভব করলাম, ওকে বদলাতেই হবে ওর স্বামী না দেখতে চাইতে পারে, আমি দেখতে চাই
দুজনেই চুপচাপ চা খাচ্ছিলাম আমি ওকে দেখছিলাম আর দূরে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল আনমনে চা খাওয়া হলে দুজনের কাপ নিয়ে উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল আমি জানি এবার চুল বাধবে সন্ধ্যে দিতে দেরি আছে আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম তারপর বিছানায় গিয়ে বসলাম যথারীতি রান্নাঘরের কাজ সেরে ঘরে ঢুকল ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল চিরুনি নিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলো আমি বললাম,
-    মুন
-    উঁ
-    বাড়িতে কাঁচি আছে?”
-    কাঁচি? কি করবে?”
-    তোমার চুলের ডগাটা সমান করে দেবো
ও হাসল। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরল। হাতে একটা মাঝারি সাইজের কাঁচি। বলল,
-    “এতে হবে?”
-    “খুব হবে, দাও, আর তুমি এখানে দাড়াও।”
বলে ওর হাত থেকে কাঁচি টা নিয়ে ওকে আয়না থেকে দূরে এনে আয়নার দিকে পেছন ফিরিয়ে দাড় করালাম। বিছানায় একটা সিঙ্গেল চাদর ভাঁজ করে রাখা ছিল। সেটা খুলে ওকে বললাম চুলটা তুলে ধর। ও ধরল। আমি চাদর টা ওর গলায় কেপের মত বেঁধে দিলাম। ও চুল ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। আমি ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা রাবার ব্যান্ড তুলে নিয়ে ওর চুল টা গোছা করে ঘাড়ের কাছে একটা পনিটেল করে বেঁধে দিলাম। ও বাধ্য মেয়ের মত অপেক্ষা করতে থাকল। আমি ওকে এবার বললাম,
-    “মুন”
-    “হু?”
-    “একদম নড়বে না”
-    “আচ্ছা”
আমি কাঁচি টা তুলে নিলাম। তারপর কিছু শব্দ হল, কিন্তু ও একটাও আওয়াজ করল না। ওর চুলের মোটা গোছাটা কাটতে বেশ জোর দিতে হচ্ছিল আমায়। মিনিট পাঁচেক সময় লাগলো, কাঁচির শব্দের তালে তালে ওর মাথাটা অল্প অল্প নড়ছিল। তারপর তিন ফুট লম্বা চুলের গোছা টা আমার হাতে আলাদা হয়ে এল। ও যেন পাথর হয়ে গেছে। নড়ছে না। সাড়া দিচ্ছে না। পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি এক ঝটকায় চিরুনি টা তুলে নিয়ে তারাতারি হাত চালাতে লাগলাম। মিনিট পনেরর মধ্যে কাজ শেষ করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর দুচোখ জলে ভেসে যাচ্ছে। আমি ওর গা থেকে টুকরো চুল ঝেড়ে ফেলে চাদর টা খুলে নিয়ে ঝেড়ে ভাঁজ করে বিছানায় রেখে দিলাম। ওর পায়ের কাছে তখন কাটা চুলের টুকরোর স্তূপ। তারপর ওর হাত ধরে টেনে এনে আয়নার সামনে দাঁড় করালাম। তখনও ওর চোখ দিয়ে জল পড়ছে। এবার আয়নার দিকে তাকিয়েই দু হাতে মুখ ঢেকে টুলটায় বসে পড়লো।
-    “এ তুমি কি করলে?”
-    “কেন? তুমিই আমায় বলেছিলে আমার যা ইচ্ছে আমি করতে পারি তুমি কিছু মনে করবে না”
ও কিছু বলল না। আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর স্বাভাবিক হল আরও কিছুক্ষণ পর। ওর কাঁধ ছুঁই ছুঁই ঢেউ খেলানো চুলে ওকে আগের থেকে বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে। ওর বয়স যেন দশ বছর কমে গেছে। এরসঙ্গে আরেকটা ব্যাপার যেটা আমি আগে ভাবিনি, ওর লম্বা চুল না থাকাতে ওর পিঠ, কাঁধ, গোটা শরীর যেন উন্মুক্ত। সেই একই জামা কাপড় পরা অবস্থাতেও অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছিল ওকেআমি ওর পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওর ঘাড় ঢাকা চুল ঘাঁটছিলাম মনের সুখে। অদ্ভুত সুন্দরী দেখাচ্ছিল ওকে যা আগে কখনও ওকে দেখে মনে হয়নি।
ওর সেই লম্বা চুলের গোছাটা আমার কাছেই রেখে দিয়েছিলাম সেই সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি হিসাবে।