Friday, March 27, 2015

দীপা

দীপা কোলকাতার মেয়ে। সবে কলেজ পাশ করে একটা বেসরকারি সংস্থায় চাকরিতে ঢুকেছে। মাইনে ভালো। তার বাড়ির অবস্থাও ভালো। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। শরীর বেশ স্বাস্থ্যবতী। কিন্তু দৃষ্টিকটু তো নয়ই। বরং সুন্দরী বলা চলে। গায়ের রঙ ভীষণ ফরসা, গোলাপি আভা। মুখ অতীব সুশ্রী। আধুনিকা। যতদিন কলেজে পড়েছে চুল ছিল কাঁধের অল্প নিচ অব্দি। তারথেকে বড় চুল কোনোদিনই রাখেনি। ইদানিং তার ইচ্ছে হয়েছিল লম্বা চুল রাখবে। তাই ঠিক করে গত প্রায় এক বছর সে আর চুল ছোট করেনি। ফলে তার চুল পিঠ পেরিয়ে প্রায় কোমর ছুইছুই। পিঠ ঢাকা একঢাল ঘন বাদামী রঙের নরম চুলে তার সৌন্দর্য বেড়েছে বই কমেনি। কিন্তু তার আর আগের মত স্টাইল করা হয়না। পাছে চুল ছোট হয়ে যায় তাই আর সে চুল নিয়ে তেমন এক্সপেরিমেন্ট করতে সাহস পায়না। এই করেই চলছিল বেশ। মাঝেসাঝে চুলের ডগাটা অল্প কেটে সমান করে নিতো নিজেই। কিন্তু এবার গরমে যেন আর পেরে উঠছিল না। একে গরম, ঘাম, তার ওপর ওই বড় চুল সামলানোই দুঃসহ হয়ে উঠছিল। কথাটা মা কে বলতেই মা হাহা করে উঠল। "কি দরকার অত বড় চুল রাখার। কাল আমার সঙ্গে পার্লার যাবি। আমি নিয়ে যাব। কোনও কথা শুনবো না। শেষে শরীর খারাপ বাধলে সামলাবে কে।" দীপা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনও কথাই টিকল না। পরদিন রবিবার, মা কোনও কথাই শুনবে না। তার সাধের চুলের গোছা টা কেটে ফেলতেই হবে। মা কোনও কথাই শুনবে না। কি দরকার ছিল মা কে বলার। এখন আফসোস হচ্ছে। মন খারাপ হয়ে গেল তার। রাতে ভাল ঘুম ও হল না। পরদিন ঘুম থেকে উঠে থেকেই শুরু হয়ে গেল মায়ের তাড়া।। ওঠ, খেয়ে নিয়ে তারাতারি রেডি হয়ে নে। বেরবো, নয়তো ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। দীপার প্রায় কান্না পাচ্ছিল। তবু আরেকবার বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মা কোনও কথাই শুনল না। দশটার মধ্যেই ওরা হাজির হল পাড়ার পার্লারে। মোটামুটি ভিড় ছিল। তাই একটু অপেক্ষা করতে হল। বসে বসে ভাবছিল দীপা কে জানে কতটা চুল কাটা যাবে আজ। আর সে আগের মত বেণী করতে পারবে কিনা কে জানে। আবার সেই পনিটেল করতে হবে বাচ্ছাদের মত। এখন তার কোনও কথাই খাটবে না। মা যা বলবে তাই করবে ওই মেয়েটা, যে কাটবে। 
 অবশেষে এল তার পালা। মা নিয়ে গিয়ে বসাল তাকে সেলুনের চেয়ারে। তারপর মা যা বলল তাতে তার চোখে জল এসে গেল। মেয়েটা দীপা কে জিগ্যেস করেছিল "কি করবে?" সে কিছু বলার আগেই মা উত্তর দিয়ে দিল, " চুল টা কেটে ফেল, দেখ কত বড় করে ফেলেছে, ওইটুকু মেয়ে সামলাতে পারে? ছোট করে দাও।" মায়ের কথা অনুযায়ী মেয়েটা দিপাকে একটা কেপ বেধে দিল গলায়। তারপর চুলটা আঁচড়াতে আঁচড়াতে জিগ্যেস করল "কতটা ছোট করাবেন? পিঠ অব্দি?" তার উত্তরে মা আবার হাহা করে উঠল "না না, ছোট করে দাও একদম বয় কাট। যেন ঘাড়ে জল না বসে।" অর্থাৎ বেণী তো দুরের কথা পনিটেল ও আর করতে হবে না তাকে। মেয়েটাও অবাক হল কথা শুনে। বলল "সব কেটে ফেলবেন? এতটা চুল?" মা কোনও কথাই শুনল না। মা অনড়। "হ্যাঁ হ্যাঁ, কি হবে অত লম্বা চুল রেখে? তুমি কাটতো।" অগত্যা। মেয়েটি কাজ শুরু করে দিল। দীপার মাথা নিচু হয়েই ছিল। সে শুধু অনুভব করল কাঁচির আওয়াজ তার ঘাড়ের কাছে। মিনিট খানেকের ও কম সময় লাগলো, তার চুলের গোছাটা আলাদা হতে তার ঘাড় থেকে। তারপর শুধু চিরুনি আর কাঁচি চলল তার গোটা মাথা জুড়ে। মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা জলের স্প্রে তে বুঝতে পারছিল না তার চোখের জল কি গড়িয়ে পরছিল গাল বেয়ে? মেয়েটা ইচ্ছে করেই সামনের চুল একটু বড় রেখেছিল, দীপার ভ্রু অব্দি। কিন্তু মা পিছনে দাঁড়িয়ে তদারকি করছিলেন ঘাড়ের চুল। যখন কাটা শেষ হল মায়ের পছন্দ অনুযায়ী তখন ঘাড় আর কানের কাছে চুল বেশি বাকি ছিলও না। দীপার সাদা কেপটা ভরে উঠেছিল ঘন বাদামি নরম চুলের টুকরোয়। দীপা ভেবেছিল বোধায় শেষ হল। আয়নার দিকে তাকায়ও নি একবারও। উঠতে যাচ্ছিল। মা আবার বসাল। এরপর মা যেটা বলল সেটায় আরও দুঃখ পেল দীপা। মা বলল "ঘাড় টা শেভ করে দাও।" দীপা মাথা নিচু করে অনুভব করল ধারাল ক্ষুরের স্পর্শ ঘাড়ে। যখন মেয়েটা কেপ খুলে নিল দীপা উঠে দাঁড়ালো মেঝের দিকে তাকিয়ে কান্না পেল তার। চেয়ারের চারপাশের মেঝে ভরে একটা ঢিপি হয়েছে চুলের। মেয়েটা টেবিলে রাখা চুলের লম্বা গছাটা দোকানের এক কোনে রাখা একটা বস্তায় ভরে দিল। ওটা বিক্রি হবে ভাল দামে। দীপা ভ্রুর কাছে অনুভব করছিল সদ্দ কাটা চুলের ডগার স্পর্শ। ঘাড়ে হাত দিতেও ভয় লাগছিল তার।
বাড়ি ফিরে যখন ঘরে ঢুকছে কাজের মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল তার দিকে। স্নান করার সময় চুলে শ্যাম্পু করতে গিয়ে বুঝল অত শ্যাম্পু তার লাগবে না। অকারনে নষ্ট হল অনেকটা। ঘাড়ে হাত পরাতে বুঝল মা কি অস্বাভাবিক ছোট করে দিয়েছে পিছনের চুল। যেন অন্য কারো ঘাড়ে হাত দিচ্ছিল সে।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হল দীপা। এতটা সুন্দরি সে কখনও ভাবেনি নিজেকে। ঠিক যতটা খারাপ তাকে লাগবে ভেবেছিল ততটাই সুন্দরি লাগছে তাকে। সত্যিই মা না সব বোঝে।